শ্রীলংকার গৃহযুদ্ধ ও তারপর অজস্র মৃত্যুর কথা পড়েছি। কিন্তু কেন শুরু হয়েছিল এই যুদ্ধ? এখন কি তা পুরোপুরি শেষ হয়েছে?
ভারত মহাসাগরের একটি ছোট দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলংকা। বিশ্বের কাছে ভারত মহাসাগরের অশ্রু নামে পরিচিত দ্বীপ দেশটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটির জনগণ দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের স্মৃতি বয়ে চলেছেন। ক্ষুদ্রাকৃতির দেশটি দীর্ঘ ২৬ বছর গৃহযুদ্ধে জর্জরিত ছিল। রক্তক্ষয়ী এই যুদ্ধে প্রাণ হারায় ১ লক্ষ নিরীহ শ্রীলংকান নাগরিক। বাসস্থান হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছিল তামিল অধ্যুষিত এলাকার অগণিত মানুষ। ইতিহাসের একমাত্র গৃহযুদ্ধ যার প্রভাবে প্রাণ হারায় দুটি স্বাধীন দেশের সর্বোচ্চ পদধারী সরকার প্রধান।
শ্রীলঙ্কার এই গৃহযুদ্ধের কারণ অনুসন্ধান করতে হলে, ফিরে তাকাতে হবে পেছনে। দ্রাবিড়ভাষী তামিল জনগনের মূল বাসস্থান দক্ষিণ ভারতে হলেও দীর্ঘদিন ধরে তামিলরা সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কায় বসবাস করে আসছে। নৃতাত্ত্বিক প্রমাণ হিসেবে যিশু খ্রিস্টের জন্মের ২০০ বছর আগে থেকেই তামিলরা শ্রীলঙ্কায় বাস করে আসছে। শ্রীলঙ্কার প্রাচীন ইতিহাস গ্রন্থ "মহাবংশ"-এ তামিলদের কথা উল্লেখিত আছে। দুর্ভাগ্যক্রমে, তখনও পরিস্থিতি ছিল সংঘাতময়। আসলে এক উত্তাল অরাজক পরিস্থিতির মধ্যেই তামিলদের শ্রীলংকায় বসতি স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। সংঘাতের কারণও আছে। তামিলরা যে সময়টায় শ্রীলঙ্কায় পৌঁছেছিল-ততদিনে সংখ্যাগরিষ্ট বৌদ্ধ সিংহলীরা শ্রীলঙ্কায় নিজেদের অবস্থা একটি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে ফেলেছে। তাছাড়া, তামিলরা হিন্দু আর সিংহলীরা বৌদ্ধ- এই সমস্যাতো ছিলোই।
শ্রীলঙ্কার উত্তরাঞ্চলটি ‘উত্তরাদেসা’ নামে পরিচিত। তেরো শতকে মাঘ নামে এক গোত্রপতি ভারতের উড়িষ্যার কলিঙ্গ রাজ্য থেকে এসে উত্তরাদেসায় একটি রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। মাঘ কলিঙ্গ থেকে এসেছিলেন বলে তিনি কলিঙ্গ মাঘ নামেও পরিচিত। মাঘ-এর রাজত্বকাল: ১২১৫ থেকে ১২৩৬ খ্রিস্টাব্দ। সিংহলী ইতিহাসবিদদের মতে, মাঘ ছিলেন চরম অসহিষ্ণু এবং নিষ্ঠূর স্বৈরশাসক। তিনি উত্তরাদেসা থেকে বসবাসরত সিংহলীদের উৎখাত করেছিলেন। নির্বাসিত সিংহলীরা বাধ্য হয়ে দ্বীপের পশ্চিম ও দক্ষিণ কোণে চলে যায়। মাঘের এ রুপ সিংহলীবিরোধী পদক্ষেপের ফলে উত্তরাদেসায় তামিল জনগোষ্ঠীর আধিক্য দেখা দেয় এবং মাঘের মৃত্যুর পর তামিলরা উত্তরাদেসায় একটি স্বাধীন রাজ্য গড়ে তোলে। রাজ্যটির নাম হয় জাফনা রাজ্য।
ব্রিটিশরা ১৮১৫ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত তৎকালীন সিলন তথা শ্রীলঙ্কা শাসন করে। ব্রিটিশ শাসনাধীন শ্রীলঙ্কায় শুরু থেকেই সামাজিকভাবে সিংহলি জনগোষ্ঠীর আধিপত্য ছিল। দেশটির উত্তর ও পূর্বাংশে ছিল তামিল ভাষাভাষীদের বসবাস আর দক্ষিণ ও মধ্য ভাগ জুড়ে ছিল সিংহলি ভাষা ভাষীদের বসবাস। মোট জনসংখ্যার ৭০-৭৫% ই সিংহলিজ ভাষা ব্যবহার করত। অপরদিকে তামিল ছিল মাত্র ১৫% লোকের ভাষা। সাধারণভাবে মনে করা হয় সিংহলি ভাষাভাষীরা খ্রীষ্টপূর্ব ৫০০ শতকের দিকে ভারত থেকে শ্রীলঙ্কায় আসেন এবং সেই থেকে দেশটিতে তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। অপরদিকে, তামিল ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী সেদেশে আরও অনেক পরে তথা খ্রিষ্টাব্দ সাত থেকে এগারো শতকে আসে বলে জানা যায়। তামিল ভাষাভাষীরা ছিল মূলত হিন্দু ধর্মাবলম্বী, বৌদ্ধরা ছিল সিংহলিজ ভাষাভাষী, বাকী ১০% ছিল মুসলিম ধর্মাবলম্বী। ১৮১৫ সালের হিসেব মতে, তৎকালীন সিলনে মোট জনসংখ্যার ত্রিশ লক্ষ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সিংহলী জনগণ এবং মাত্র তিন লক্ষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী তামিল জনগোষ্ঠী ছিল। কিন্তু ব্রিটিশরা আসার পর যখন শ্রীলঙ্কায় ব্যাপকহারে বিভিন্ন ধরনের চাষাবাদ শুরু হয় তখন চাষাবাদের কাজে নিয়োগ করার জন্য ব্রিটিশ কর্মকর্তারা ভারত থেকে প্রায় দশ লক্ষ তামিল ভাষাভাষী লোক নিয়ে আসে।
ধীরে ধীরে দেশের উত্তর প্রান্তে তামিল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনপদ গড়ে উঠে। ইংরেজদের সহায়তায় তামিল ভাষায় কথা বলা মানুষদের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। এবং তামিলদের মধ্যে একটা শিক্ষিত শ্রেণী তৈরী হয়। ব্রিটিশ কর্মকর্তারা বিভিন্ন আমলাতান্ত্রিক পদে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মাত্রাতিরিক্তভাবে তামিলদের নিয়োগ দিতে থাকে। সরকারী চাকুরীজীবীর ৮০% ই ছিল তামিল। এতে সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলি জনগণের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। শুরু হয় ব্রিটিশ শাসকদের Divide and Rule-এর পুরোনো খেলা। ভারতীয় উপমহাদেশের মতোই কলোনিয়াল যুগেই সিংহলী জাতীয়তাবাদ স্ফুরণ ঘটেছিল। সিংহলী জাতীয়তাবাদীরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে।১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ সরকার সিলন তথা শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতা ঘোষণা করে। স্বাধীনতা উত্তর সংবিধান রচনার পরিপ্রেক্ষিতে তামিল-সিংহলী সংঘাতের সূচনা। স্বাধীনতা পরবর্তী সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হয়। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই শ্রীলঙ্কা সরকার সংখ্যালঘু তামিল জনগোষ্ঠীর অধিকার খর্ব করে বৈষম্যমুলক আইন পাশ করতে থাকে। বিশেষ করে ব্রিটিশদের আনা ভারতীয় তামিলদের অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে যায়।
১৯৫৬ সালে প্রধানমন্ত্রী বন্দরনায়েকে ‘সিনহালা ওনলি অ্যাক্ট’ ঘোষনা করেন। এর মাধ্যমে সরকার সিংহলি ভাষাকে দেশটির একমাত্র দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ঘোষণা করে। ফলে তামিলদের জন্য সরকারি চাকরি করা দুরুহ হয়ে পড়ে। কারণ তারা সিংহলি ভাষা জানত না। ইতিমধ্যে ‘সিলন সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট ১৯৪৮’ প্রায় সাত লক্ষ ভারতীয় তামিল জনগোষ্ঠীকে রাষ্ট্রহীন করে দেয়। এদের মধ্যে বেশিরভাগই ব্রিটিশ শাসনাধীন সময়ে দ্বীপটিতে কৃষিকাজের জন্য ভারত থেকে এসেছিল। হঠাৎ নাগরিকত্ব হারানো এই বিশাল সংখ্যক মানুষের মধ্যে দেশটির সরকার এবং সংখ্যাগরিষ্ট জনগনের বিরুদ্ধে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। তামিল মিডিয়াকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। স্কুল ও কলেজে তামিলদের শিক্ষাগ্রহণে কোটা আরোপ করে। তারা আগের মত শিক্ষাগ্রহণ করতে পারত না। সিংহলিদের সকল ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয় সরকার। সরকারের এই সকল সিদ্ধান্ত তামিলদের চূড়ান্তভাবে ক্ষুব্ধ করে তোলে। এই ঘটনা তামিলদের মনে গভীরভাবে প্রভাব ফেলে এবং এভাবেই একটি দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের বীজ তামিল জনগণের মনে দানা বেঁধে উঠতে থাকে।
(ছবিঃ- দাঙ্গায় জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে এক তামিলভাষীর গাড়ী, ১৯৫৮ সাল)
১৯৫৮ সালে সেখানে একটি ব্যপক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। যাতে সিংহলি ও তামিল ভাষাভাষী জনগণ একে অপরের বিরুদ্ধে সহিংসতায় লিপ্ত হয়ে পড়ে। এর ফলে বাধ্য হয়ে হাজার হাজার তামিলভাষী লোকজন দেশটির তামিল সংখ্যাগরিষ্ঠ উত্তরাঞ্চলে পাড়ি জমায়।
(ছবিঃ- ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ)
১৯৭২ সালে মঞ্চে আবির্ভাব ঘটে ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণের, যিনি পরবর্তিতে শ্রীলঙ্কান তামিলদের একচ্ছত্র নেতা হয়ে উঠেন। এবং দীর্ঘ গৃহযুদ্ধে তামিলদের পক্ষে তিনিই একমাত্র সেনাপতিতে পরিণত হন। প্রভাকরণ ১৯৭২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সংগঠিত করে ‘নতুন তামিল আন্দোলন’ নামে একটি ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। তামিল ছাত্রদের গ্রেডিং সিস্টেমে সমঅধিকার এবং উচ্চ শিক্ষায় আরো বেশি সংখ্যক তামিল ছাত্র-ছাত্রীকে সুযোগ দেওয়ার দাবিতে এই আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৭৫ সালে জাফনার মেয়র এদের হাতে হত্যার শিকার হন, ফলে চলমান সহিংসতা আরও উস্কে উঠে। প্রভাকরণ ১৯৭৫ সালের ৫ মে "দি লিবারেশন টাইগারস অব তামিল ইলম "(এলটিটিই) গঠন করেন। কারণ এর আগে প্রভাকরণের গড়ে তোলা তামিল নিউ মুভমেন্ট অন্য আরেকটি তামিল আন্দোলনের দলে যুক্ত হয়ে যায়। এইসময়, প্রায় ১৫ টি উগ্র সংগঠন গড়ে উঠেছিল। তাদের মধ্যে লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলম (এলটিটিই), ছিল সবচেয়ে বড় ও সু সংগঠিত সংগঠন। প্রভাকরণ, ফরাসি বিপ্লবের নায়ক নেপোলিয়নের আদর্শের দ্বারা প্রভাবিত ছিল। তামিল টাইগার্সদের লক্ষ্য ছিল স্বাধীন তামিল রাষ্ট্র গঠন করা।
(ছবিঃ- এলটিটিই-এর পতাকা)
পৃথিবীর অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনগুলো থেকে তামিল টাইগার্স ছিল সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তাদের ছিল নিজস্ব সরকার, ব্যাংক, সেনাবাহিনী, নৌ ও বিমানবাহিনী। শ্রীলংকার আর্মিদের মত করেই তামিল টাইগার্সদের সেনাদের র্যাঙ্ক নির্ধারিত ছিল। একটি গেরিলা আক্রমণকে সফল করার জন্য প্রায় সবকিছুই ছিল তামিল টাইগার্সদের। রাজনৈতিক ও সামরিক উভয় শাখার নেতৃত্বে ছিল প্রভাকরণ।
তামিলদের অর্থায়নের বড় উৎস ছিল প্রবাসী তামিলরা। তারা বিভিন্ন ভাবে টাইগার্সদের সার্বিক সহায়তা করত। সবচেয়ে বড় সমর্থকরা ছিলেন, ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের সরকার ও সাধারণ জনগণ। তাছাড়া শ্রীলংকার সাথে বিবদমান দেশগুলো গোপনে তামিল টাইগার্সদের সাহায্য করত। প্রাথমিকভাবে, ভারত সরকার তাদের সামরিক ট্রেনিং ও সহায়তা করত। ধীরে ধীরে তামিল টাইগার্স অত্যন্ত শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে গড়ে উঠে। তারা স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবিতে গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়।
১৯৭৭ সালের জাতীয় নির্বাচনে তামিল অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে ছোট ছোট কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত ‘দি তামিল ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট’ নামক রাজনৈতিক জোট বেশিরভাগ আসনে জয়লাভ করে। কিন্তু শ্রীলঙ্কা সরকার তাদের পার্লামেন্টে অংশগ্রহণ করতে দেয়নি। কারণ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা তামিলদের জন্য শ্রীলঙ্কা থেকে স্বাধীন হয়ে আলাদা দেশ গঠনের পক্ষাবলম্বী। তামিলরা আরেক দফা দাঙ্গার শিকার হয় যখন তাদের বিরুদ্ধে এক সিংহলি পুলিশ কন্সটেবলকে পেটানোর অভিযোগ উঠে। এবারও তীব্র সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৮৩ সালে দেশব্যাপী চলতে থাকা জাতিগত সহিংসতা আর বিশৃংখলা আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহযুদ্ধের সূচনা করে, শুরু হয় প্রথম ইলম যুদ্ধ। সেই বছর, ২৩ জুলাই তামিল টাইগার্স শ্রীলংকার সেনাবাহিনীর উপর সরাসরি আক্রমণ করে। অতর্কিত আক্রমণে ১৩ সেনা কর্মকর্তা ও ৩৩ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। সেনা মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শ্রীলংকাতে দাঙ্গা শুরু হয়ে যায়। দাঙ্গাতে প্রায় ৩ হাজার নিরীহ তামিল নাগরিক মারা যায়। এই ঘটনাকে শ্রীলংকাতে "ব্ল্যাক জুলাই" বলে অভিহিত করা হয়।
(ছবিঃ- "ব্ল্যাক জুলাই" দাঙ্গার ছবি; এক তামিল যুবককে নিগ্রহ করছে সিংহলিরা)
এতে দেশব্যাপী তামিলরা সহিংসতার শিকার হয় এবং হাজার হাজার তামিল নিহত হয়। সিংহলি অধ্যুষিত অঞ্চলগুলো থেকে তামিল জনগণকে বাধ্য হয়ে অন্যত্র সরে যেতে হয়। হাজারো তামিল নাগরিক হত্যাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয় তামিল অঞ্চলগুলো। তারা মনে করেছিল সরকার ইচ্ছে করে তাদের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে। এ সময় প্রচুর তামিল যুবক এলটিটিই তে যোগদান করে। যা পরবর্তীতে তাদের যুদ্ধকে এগিয়ে নিতে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। শুধু পুরুষ নয় তামিল টাইগার্সে যোগ দিয়েছিল নারী ও শিশু। ১৯৮৩ সাল থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ভারত সরকার সরাসরি তাদের সাহায্য করত। বিশেষ করে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা RAW তামিলদের ভারতে ট্রেনিং ক্যাম্পের ব্যবস্থা করে। ৪৯৫ জন বিদ্রোহী, ৩২ টি ক্যাম্পে ট্রেনিং গ্রহণ করত।
(ছবিঃ- তামিলনাড়ুতে RAW পরিচালিত ট্রেনিং ক্যাম্পে তামিল টাইগারদের নেতারা; বাঁদিক থেকে ৩ নম্বরে প্রভাকরণ স্বয়ং)
শ্রীলংকা সরকার বারবার ভারতের সংশ্লিষ্টতার কথা বললেও, বরাবরই ভারত তা অস্বীকার করে আসছিল। ১৯৮৪ সালে, এলটিটিই সহ অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনগুলো একত্রিত হয়ে একটি সাধারণ সংগঠন গড়ে তোলে যার নাম দেয় ইলম ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট গঠন করে।
শান্তি প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে ১৯৮৫ সালে শ্রীলঙ্কা সরকার এবং তামিল টাইগারদের মধ্যে সংলাপের আয়োজন করা হলেও তা ব্যর্থ হয়। ১৯৮৭ সালে শ্রীলংকান সেনাবাহিনী তামিল টাইগারদের উত্তরাঞ্চলের জাফনা শহরের দিকে ঠেলে দেয়। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী সিদ্ধান্ত নেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ভারত সরাসরি হস্তক্ষেপ করবে। সেইবছরই, শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী জয়াবর্ধনে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে শান্তি চুক্তির প্রস্তাব দেন। ভারত সরকার তামিলদের পক্ষে বেশ কয়টি দাবি জানিয়ে একটি চুক্তি সই করে। দাবিগুলোর মধ্যে ছিল, তামিল ভাষাকে স্বীকৃতি প্রদান, পুরো তামিল অঞ্চলকে এক সরকারের অধীনে রাখা, রাজ্য সরকারের ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করা, ভারতীয় বাহিনীকে শ্রীলংকায় প্রবেশের সুযোগ দেওয়া সহ ১৩ টি বিষয়। চুক্তি অনুসারে ভারতীয় শান্তি রক্ষা বাহিনী শ্রীলংকায় প্রবেশ করে। ভারতের এই চুক্তিকে এলটিটিই সমর্থন করেনি। তারা ভারতীয় বাহিনী অনুপ্রবেশের বিপক্ষে ছিল। চুক্তি অনুযায়ী ভারতীয় সেনাবাহিনী দেশের উত্তর ও পুর্বাংশে শান্তি স্থাপনের কাজে নিয়োজিত হয়।
(ছবিঃ- শ্রীলঙ্কার ত্রিঙ্কোমালি ক্যাম্পে ভারতীর শান্তিরক্ষা বাহিনী)
রাজীব গান্ধীর এই সিদ্ধান্ত তামিলদের ক্ষুব্ধ করে তোলে। তারা রাজীব গান্ধীকে তাদের শত্রু ভাবা শুরু করে এবং তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। বাকি তামিল গেরিলা বিদ্রোহীগুলো শান্তি চুক্তি মেনে নিলেও তামিল টাইগার্স এই চুক্তির সম্পূর্ণ বিরোধী ছিল। ভারতীয় সেনাবাহিনী "অপারেশন পবন" নামে তামিলদের গুরুত্বপূর্ণ শহর জাফনা থেকে তামিল টাইগার্সদের বিতাড়িত করে।
(ছবিঃ- অপারেশন পবন চলাকালীন ভারতীয় সেনা)
ফলে তামিল টাইগার্স ভারতীয় বাহিনীর উপর আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়। তারা জঙ্গলে পালিয়ে গিয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। ১৯৮৭ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ভারতীয় বাহিনী অপারেশন পরিচালনা করে। এসময় তামিল টাইগার্সদের সাথে তাদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। ৩ বছরে প্রায় ১ হাজার ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়। ১৯৮৯ সালে রাজীব গান্ধী সরকারের পতন হলে অপারেশন স্তিমিত হয়ে পড়ে। অপরদিকে শ্রীলংকার জনগণও তাদের ভূমিতে ভারতীয় বাহিনীর আগমনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠে ফলে শ্রীলংকা সরকারের অনুরোধে ভারত ১৯৯০ সালে শান্তি বাহিনী সরিয়ে নিয়ে যায়। ভারতীয় বাহিনী চলে যাওয়ার পর সহিংসতার মাত্রা আরো বেড়ে যায়। তামিল টাইগাররা এবার এই লড়াইয়ের নাম দেয় দ্বিতীয় ইলম যুদ্ধ। ১৯৯০ সালের ১১ জুন তামিল টাইগাররা প্রায় ছয় থেকে সাত শত শ্রীলঙ্কান পুলিশ সদস্যকে এক এক করে গুলি করে হত্যা করে। এর এক সপ্তাহ পরে তৎকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী টাইগারদের বিরুদ্ধে সর্বময় যুদ্ধের ঘোষণা দেন।
১৯৯১ সালে আসন্ন ভারতীয় নির্বাচনে রাজীব গান্ধীর জয়ের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এলটিটিইর প্রধান ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণের ধারণা ছিল রাজিব গান্ধী নির্বাচনে জয়লাভ করলে তিনি পুনঃরায় ভারতীয় সেনাবাহিনীকে শ্রীলঙ্কায় পাঠাবেন। ফলে, তামিল টাইগার্স রাজীব গান্ধীকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ১৯৯১ সালের ২১ মে, তামিলনাড়ু রাজ্যের শ্রীপেরুম্বুদুর-এ এক নির্বাচনী প্রচার সভার ফুলের মালা গ্রহণের সময়, মালার মধ্যে থাকা বোম বিস্ফোরণে নিহত হন রাজীব গান্ধী। এলটিটিই-এর সদস্য, এক নারী এই আত্মঘাতী হামলা চালায়। এটি ছিল তামিল টাইগার্সদের দ্বারা সবচেয়ে বড় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। এই ঘটনার পর থেকে তৎকালীন ভারতে বড় নেতারা ফুলের মালা গ্রহণ করত না।
শুধু ভারতেরই না, ১৯৯৩ সালে শ্রীলংকার তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রেমদাসাকে, মে দিবসের এক র্যালীতে আত্মঘাতী হামলা করে হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ড শান্তি চুক্তিকে লন্ডভন্ড করে দেয়। সরকার দলীয় বিভিন্ন দায়িত্ব প্রাপ্ত সচিব, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বর্গকে একের পর এক হত্যা করতে থাকে তামিল টাইগার্স। পরবর্তী ২৬ বছরে তারা ৭ জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীতে হত্যা করে। এমনকি তামিল অঞ্চলে যারা সরকারের পক্ষ অবলম্বন করত তাদেরকেও হত্যা করে তামিল টাইগার্স। ১৯৯৪ সালে নব নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা নতুন করে তামিল টাইগারদের সাথে শান্তি আলোচনা শুরু করেন। সংলাপ ব্যর্থ হয়, সরকার কঠোর হাতে বিদ্রোহ দমনের পথে হাঁটে। সরকার এবারের যুদ্ধকে ‘শান্তির জন্য যুদ্ধ’ নামকরণ করে আর টাইগারদের কাছে এটা ছিল তৃতীয় ইলম যুদ্ধ।
(ছবিঃ- এলটিটিই-যোদ্ধাদের একটা বড়ো অংশই ছিলো শিশু ও কিশোর যাদের বয়স ছিলো ৮ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে)
১৯৯৫-৯৬ সালে শ্রীলংকান সেনাবাহিনী পূর্ণ শক্তিতে বিদ্রোহ দমনে উত্তরাঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করে। ১৯৯৫ সালে নৌবাহিনীর জাহাজ ডুবিয়ে দিয়ে বিদ্রোহীরা শুরু করে তৃতীয় ইলম যুদ্ধ। জাফনা শহর থেকে বিদ্রোহীদের হঠাতে ব্যাপক মাত্রায় অভিযান চালানোর ফলে প্রায় ৬ লক্ষ তামিল জনগণ বাস্তুচ্যুত হয়। ১৯৯৯ সালে এলটিটিই প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গার উপর হামলা করে। যদিও তখন তিনি বেঁচে যান, তবে তার একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। ৯০ দশকে বিভিন্ন সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে শান্তি চুক্তির প্রস্তাব দিলেও এলটিটিই তা প্রত্যাখ্যান করে যদিও প্রভাকরণ বলেছিল, “শান্তি চুক্তি আমাদের লক্ষ্য অর্জনের পথে সিঁড়ি স্বরূপ”। তামিলরা গেরিলা পদ্ধতিতে বিভিন্নভাবে হামলা অব্যাহত রাখল। যে সকল নিরীহ নাগরিক তামিল অঞ্চল ছেড়ে চলে যেতে চাইত, তামিল টাইগার্স তাদের রুখে দিত। কারণ তারা বিশ্বাস করত নিরীহ জনগণ থাকলে সেনাবাহিনী তাদের উপর আক্রমণের সুযোগ কমে আসবে।
(ছবিঃ- এক যুবক এলটিটিই গেরিলা যোদ্ধা)
২০০০ সালে নরওয়ের মধ্যস্থতায় আবার শান্তি আলোচনা শুরু হয়। ইতিমধ্যে ২০০১ সালে রণিল বিক্রমসিংহে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তিনি তামিলদের সাথে শান্তিপুর্ণ উপায়ে আলোচনার ভিত্তিতে সমস্যা সমাধানের পক্ষপাতি ছিলেন। আলোচনা শুরু হলে কয়েক দশক পর প্রথমবারের মত শ্রীলঙ্কায় কিছুটা শান্তির বাতাবরণ বইতে থাকে। অন্যদিকে, আমেরিকা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং যেসব দেশে সন্ত্রাসী সংগঠন ছিল তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অর্থ ও সামরিক সাহায্যের ঘোষণা দেয়। যদিও এলটিটিই মনে করত তারা কোন ধর্মের নামে যুদ্ধ করত না। প্রভাকরণ বলেছিল তারা কোন সন্ত্রাসী সংগঠন না। তারা শুধু স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে। একই বছর তারা কলম্বোর বিমান বন্দরে আক্রমণ করে। যা বহু লোকের প্রাণ হানি ঘটায়। এই হামলা শ্রীলংকার অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। পর্যটন শিল্প বিপদের মুখে পড়ে যায়।
(ছবিঃ- কলম্বোর বন্দরনাইকে বিমানবন্দরে এলটিটিই আক্রমনের পর)
২০০২ নরওয়ের প্রচেষ্টায় সরকার ও তামিল টাইগার্সদের মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরু হয়। আলোচনা চলা কালেও সেনাবাহিনীর সাথে লড়াই চলতে থাকে। নরওয়েতে উভয় পক্ষ একটি ক্ষমতা ভাগাভাগি চুক্তিতে উপনীত হয়। এর আওতায় দেশের উত্তর এবং পশ্চিম অঞ্চলে তামিল স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হয়। দু’পক্ষের মধ্যে একটি যুদ্ধ বিরতি চুক্তিও সই হয়। ২০০২-২০০৪ পর্যন্ত আলোচনা চলতে থাকে। তামিল বিদ্রোহীরা রাজ্য সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধির দাবি তোলে। অপরদিকে সরকারও দাবি মেনে নিতে সম্মত ছিল। হঠাৎ, তামিল বিদ্রোহীরা শান্তি আলোচনা বন্ধ করে দেয়। তারা দাবি করে যে, সেনাবাহিনী অন্যায়ভাবে তাদের উপর আক্রমণ করেছে। সরকার এবং তামিল টাইগারদের বিরোধ চরমে পৌঁছে।
২০০২ সালের সই হওয়া যুদ্ধবিরতির পর সবচেয়ে বেশি পরিমাণ সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে ২০০৫ সালের আগষ্ট মাসে। সেনাবাহিনী ও তামিল টাইগারদের মধ্যে লড়াইয়ে শত শত মানুষ নিহত হয় আর হাজার হাজার মানুষ হয় বাস্তুচ্যুত। ২০০৪ সালে, তামিল টাইগার্সদের মধ্যে বিভাজন দেখা হয়। পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার বিনায়কমুর্তি মুরলীথরন যিনি 'কমান্ডার করুনা আমান" নামে পরিচিত ছিলেন, প্রায় ৬০০০ যোদ্ধাকে নিয়ে এলটিটিই ত্যাগ করে সরকারের পক্ষ নেন। একই সময় সুনামির আক্রমণে বেশ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয় এলটিটিই। তামিল টাইগার্স এবার বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে। ২০০৫ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয় মাহিন্দ্রা রাজাপক্ষে। একই বছর পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে হত্যা করে তামিল টাইগার্স, যিনি নিজেও একজন তামিল ছিলেন। এভাবে লড়াই চলতেই থাকে। সরকার সিদ্ধান্ত নিল, তারা ব্যাপক ভাবে তৎপরতা চালাবে। সেই অনুযায়ী অভিযান শুরু হয়।
২০০৬ সালের এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত তুমুল যুদ্ধ চলে ও 'চতুর্থ ইলম যুদ্ধ' শুরুর আশঙ্কা তৈরি হয়। সেইবছর অক্টোবরে জেনেভায় অনুষ্ঠিত আলোচনা শুরু হয়ে তা আবারও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। সরকারের সিদ্ধান্তে শ্রীলঙ্কান সেনাবাহিনী এবার জোরালো আক্রমণ শুরু করে তামিল টাইগারদের দখলকৃত পূর্ব এবং উত্তরাঞ্চলে। তামিল টাইগারদের নিশ্চিহ্ন করাই এবারের হামলার মুল উদ্দেশ্য। ২০০৭-০৯ সাল পর্যন্ত চলা এ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে প্রচুর মানুষ নিহত হয়। সেনা আর টাইগারদের সংঘর্ষের মুখে পড়ে প্রচুর সাধারণ মানুষের প্রাণহানী হয়। গ্রামের পর গ্রাম মাটির সাথে মিশয়ে দেওয়া হয়। অনেক টাইগার সেনাবাহিনীর হাতে যাতে ধরা পড়তে না হয় তার জন্য আত্নহত্যার পথ বেছে নেয়। আবার গ্রেফতারকৃত অনেক তামিল টাইগার সদস্যদের সেনাবাহিনীর দ্বারা হত্যার শিকার হন বলে অভিযোগ আছে। প্রায় এক লক্ষ লোকের প্রানহানী ঘটে এই সংঘর্ষে যা দু’পক্ষের তরফেই হয়েছে। জাতিসংঘ এই লড়াইকে ‘রক্তস্নান’ বলে অভিহিত করে। বিশ্বজুড়ে শ্রীলঙ্কান সেনাবাহিনীর যুদ্ধাপরাধ তদন্ত করার দাবি উঠে।
(ছবিঃ- যুদ্ধে গৃহহারা নাগরিকরা, ২০০৯)
২০০৯ এর জানুয়ারী মাসে টাইগারদের ঘোষিত রাজধানী কিলোনাচ্চি দখল করে নেয় সেনারা। ১৭ই এপ্রিল সরকার ঘোষিত দুই দিনের অস্ত্রবিরতি শেষ হওয়ার পর যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানায় বিদ্রোহীরা। তবে সরকার এ আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে। ২০ শে এপ্রিল ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়া বিদ্রোহীদের আত্মসমর্পণের জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয় সরকার। যুদ্ধাঞ্চল থেকে পালিয়ে আসে প্রায় দশ হাজার সাধারণ নাগরিক। এক সপ্তাহের মধ্যে এই সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় এক লাখ ১৫ হাজার। ২৬ এপ্রিল একতরফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে এলটিটিই। সরকার টাইগারদের এই ঘোষণাকে 'হাস্যকর' অভিহিত করে জানায় তাদের অবশ্যই আত্মসমর্পণ করতে হবে। ২৫ বছর আগে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ১৬ই মে প্রথমবারের মতো সমগ্র উপকূলসীমার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় সেনাবাহিনী। জর্ডান সফররত প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষে ঘোষণা করেন, এলটিটিই পরাজিত হয়েছে। ১৭ই মে বেসামরিক নাগরিকের বেশ ধরে নৌকা করে পালানোর সময় নিহত হয় ৭০ এর বেশি এলটিটিই যোদ্ধা। এছাড়া আরও অনেকে আত্মঘাতী হামলার মাধ্যমে প্রাণ বিসর্জন দেয়। যুদ্ধ এলাকার সকল বেসামরিক নাগরিককে মুক্ত করার ঘোষণা দেয় সেনাবাহিনী। অবশেষে, ১৮ মে প্রভাকরণের মৃত্যু হয়।
তামিল টাইগারদের পরিচালিত একটি ওয়েবসাইটে বলা হয় ‘আমরা এই যুদ্ধের তিক্ত সমাপ্তিতে পৌঁছে গেছি ’। দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে চলা সহিংসতার অবসান ঘটে। বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা শ্রীলঙ্কানরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। সমাপ্তি ঘটে কয়েক দশক ধরে চলমান এশিয়ার দীর্ঘতম গৃহযুদ্ধের।
The History of Tamil/Sinhalese Conflict
Conflict and Confusion in Sri Lanka
শ্রীলঙ্কার রক্তাক্ত ইতিহাস | বাংলাদেশ প্রতিদিন
https://roar.media/bangla/main/history/sri-lankan-civil-war/
লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলম - উইকিপিডিয়া
তামিল টাইগার (LTTE) Liberation Tigers of Tamil Eelam
History of the Sri Lankan Civil War
For Sri Lanka, a Long History of Violence
The scars of Sri Lanka's civil war
[সমস্ত ছবির সুত্রঃ- উইকিপিডিয়া ও গেটি ইমেজেস]
No comments