Header Ads

Header ADS

 

হিটলারের জীবনের শেষ মুহূর্তগুলো কেমন ছিল?

হিটলারের জীবনের শেষ মুহুর্তগুলো।

রাশিয়ান ও মিত্র বাহিনীর সৈন্য বাহিনী ১৯৪৫ এর জানুয়ারির দিকেই পোল্যান্ড অতিক্রম করে পূর্ব জার্মানির দিকেই এগিয়ে আসে, বার্লিনের দিকে এসে বম্বিং করতে শুরু করলে হিটলার তার জন্যে তৈরি বাঙ্কারে ফিরে যায়। এপ্রিল মাসের শুরুতে ২.৫ মিলিয়ন রাশিয়ান সৈন্য জার্মানির রাজধানী বার্লিনে উপস্থিত হয়। সপ্তাহখানেকের মধ্যেই তারা হিটলারের বাংকারের খুব কাছেও এসে পড়ে।

২৮শে এপ্রিল হিটলার ফিল্ড মার্শাল কাইটেল-এর কাছে বেতার বার্তা পাঠালেন, ‘এখনো বার্লিনের মুক্তির প্রত্যাশায় আছি। ওয়েংক কোথায়? হেনরিচির খবর কি?'

কাইটেলের কাছে পাঠানো বার্তার উত্তর আর কখনো আসেনি। কারণ ওয়েংক-এর বাহিনী নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল এর আগেই। আর হেনরিচি রাশিয়ানদের কাছে আত্মসমর্পণ এড়াবার জন্য পশ্চিম দিকে হটে গিয়েছিল। ২৮ ও ২৯শে এপ্রিল বার্লিনের পরিস্থিতির আরো চরমমাত্রার অবনতি ঘটে। বাঙ্কার থেকে রাশিয়ানদের বোম্বিং এর শব্দ শোনা যাচ্ছে।

ইভা ব্রাউনকে বিয়েঃ

এরপরই সম্ভবত হিটলার জয়ের সমস্ত আশা হারিয়ে ফেলেছিলেন। হিটলার তার সহকারীর একজন ট্রুডল জাঙ্গকে তার সহায় সম্পত্তির উইল প্রদান করে দিলেন, রাজনৈতিক কার্যকলাপের বিবরণ ও নির্দেশ তৈরি করে ফেললেন। তারপর হিটলার তার উত্তরাধিকারী হিসাবে এ্যাডমিরাল ডোয়েনিজকে জার্মান রাইখের প্রেসিডেন্ট ও সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক নিযুক্ত করেন। এছাড়া চ্যান্সেলর হিসাবে গোয়েবলসকে নিয়োগ দেন। তারপর হিটলার তার দীর্ঘকালের সঙ্গী ইভা ব্রাউনকে বিয়ে করলেন, ২৯শে এপ্রিল রাত তিনটায় তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছিল। বিয়ের পরপর হিটলার তার সেক্রেটারি ও খুব ঘনিষ্ঠ ব্যাক্তিদের নিয়ে বিবাহ অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেন। হিটলারের ব্যাক্তিগত সহকারী মার্টিন বোরম্যান, গোয়েবলস সবাই বিবাহ পরবর্তী পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন। গের্দা ক্রিস্টিয়ানের দিকে তাকিয়ে ইভা তার হাতের বিবাহের রিং সবাইকে দেখান। বাইরের দুনিয়ায় বোমের শব্দ চললেও হিটলার তখন তার ঘনিষ্ঠজনদের সাথে নিয়ে ছোট করে বিবাহ পরবর্তী শ্যম্পেইন পার্টিতে অংশ নেন।

উদযাপনের পর হিটলার তার ঘনিষ্ঠজনদের উদ্দেশ্য করে তার শেষ কথা গুলো বলে যান, তার মধ্যে শুরুতে হিটলার তার ও ইভার কাটানো সুন্দর মুহুর্তগুলো স্মরণ করেন। বিয়েকে হিটলারের জীবনের অন্যতম সুন্দর অভিজ্ঞতা হিসেবে তুলে ধরেন। অতঃপর হিটলার যুদ্ধে হারের নিশ্চয়তার কথা স্বীকার করেন। যুদ্ধে হারলেও হিটলার নিজেকে রাশিয়ান বাহিনীর বাহিনীর হাতে তুলে দেবেন না বলে জানান।

মৃত্যুর প্রস্তুতিঃ

এরপরই হিটলার তার আত্মহত্যার পর্যায়ক্রমিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন, তার সহকর্মীদের শেষ সময়ের জন্য প্রস্তুত হতে বলেন। নিজের ও রাজনৈতিক যত গুরুত্বপূর্ণ নথি আছে, তা তার দেহরক্ষীকে নষ্ট করে ফেলার নির্দেশ দেন। এমনকি তার আদরের কুকুর ব্লুন্ডকেও বিষপানে হত্যা করেন। ৩০ মে সোমবার ভোর হওয়ার কিছু আগে তিনি তার সকল অনুচরকে ডেকে লাইনে দাঁড় করান এবং ধীরে ধীরে চলতে চলতে প্রত্যেকের সাথে করমর্দন করে বিদায় নিলেন। ভোর হওয়ার পর হিটলার খবর পেলেন রাশিয়ানরা বার্লিন নগরীর কেন্দ্রস্থলে ঢুকে পড়েছে এবং দুই ব্লক দূরে আছে। এতে তার মধ্যে কোন ভাবান্তর লক্ষ্য করা গেল না। বেলা দুইটার সময় তিনি স্বাভাবিক নিয়মেই দুপুরের খাওয়া শেষ করলেন। হিটলার তার অতিরিক্ত ব্যক্তিগত কর্মচারী অত্ত গুন্সেকে নির্দেশ দেন আত্মহত্যার পর তার ও নববিবাহিতা স্ত্রী ইভা ব্রাউনের মৃতদেহ যেন পুড়িয়ে ফেলা হয়।

এরপর হিটলার গোয়েবলস, বোরম্যান ও উপস্থিত অন্য সবার কাছ থেকে শেষবারের মত বিদায় নিয়ে ইভাসহ নিজের ঘরে ঢুকে আস্তে করে দরজা ভিড়িয়ে দিলেন। কয়েক মিনিট পর বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে হিটলারের অনুগতরা যারা রুমের বাইরে বসে ছিলেন তারা একটি গুলির শব্দ শুনতে পেয়ে রুমে প্রবেশ করেন এবং দেখেন সোফায় হিটলার ও ইভা দুজনের প্রাণহীন শরীর পড়ে আছে। ইভা সায়ানাইড খেয়েছেন। হিটলার সায়ানাইড খেয়ে বাড়তি সতর্কতা হিসেবে ব্যক্তিগত পিস্তল দিয়ে নিজ মাথায় গুলি করেছেন।

মৃত্যু পরবর্তী বন্দোবস্তঃ

৩০শে এপ্রিল হিটলার তার অতিরিক্ত ব্যক্তিগত কর্মচারী অত্ত গুন্সেকে নির্দেশ দেন আত্মহত্যার পর তার ও নববিবাহিতা স্ত্রী ইভা ব্রাউনের মৃতদেহ যেন পুড়িয়ে ফেলা হয়। হিটলার ইটালির শাসক মুসোলিনির মত অপমানের শিকার হতে চাননি। মুসোলিনি বিপ্লবীদের কাছে কিছুদিন আগে ধরা পরেন এবং হত্যার পর তার দেহটি মিলানের একটি স্কয়ারে ঝুলিয়ে রাখা হয়।

ব্যক্তিগত কর্মচারী অত্ত গুন্সে এবং আরতুর অ্যাস্কামান লাশ দু'টিকে কম্বলে মুড়ে নেয় এবং এগুলোকে বাঙ্কার থেকে বাইরে আনে। মৃতদেহ গুলোতে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়।একজন ক্রোধান্মত্ত একনায়ক আগুনে জ্বলতে থাকেন যিনি ভেবেছিলেন তৃতীয় রীচ ১০০০ বছর রাজত্ব করবে কিন্তু তার স্থায়িত্ব হয়েছিল মাত্র ১২ বছর। হিটলারের মৃত্যুর খবর আরও ২৪ ঘণ্টা গোপন রাখা হয়।

পরদিন ১লা মে জার্মান সরকার হিটলারের মৃত্যুর ঘোষণা দেয়। রাশিয়ান রেড আর্মি ২রা মে বাঙ্কারে প্রবেশ করেতারা পুরো বাঙ্কার তল্লাশী করে কিন্তু তারা কিছুই পায়না।তল্লাশী অব্যাহত থাকে। ৪ মে একজন রাশিয়ান সৈনিক রীচ বাসভবন সংলগ্ন বাগানের একটি গর্তে অগ্নিদগ্ধ কম্বলের একটি অংশ দেখতে পায়। সে কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করে। গর্তটি খোঁড়া হয় এবং হিটলারের প্রিয় কুকুর ব্লুন্ডিসহ তার এবং তার স্ত্রীর অগ্নিদগ্ধ মৃত দেহ পাওয়া যায়। পরদিন দন্ত পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমানিত হয় যে এটি হিটলারের মৃতদেহ।

কঠোর সতর্কতা ও নিরাপত্তার মধ্যে হিটলার ও ইভা ব্রাউনের মৃতদেহ মস্কোতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরে মাগডিবার্গের একটি প্যারেড গ্রাউন্ডের নিচে দাফন করা হয়।১৯৭০ সালে রাশিয়ার সরকার মৃতদেহগুলো তুলে পুনরায় পুড়িয়ে ফেলে। ছাইগুলো একটি নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।

তথ্যসূত্রঃMI5 - The Security Service

No comments

Powered by Blogger.