Header Ads

Header ADS

 

সুন জু কে ছিলেন? যুদ্ধ সম্পর্কে তার পর্যবেক্ষণ কি?

বইয়ের জগতে সামান্য হলেও আসা-যাওয়া আছে এমন যে কেউই ‘দ্য আর্ট অব ওয়ার’ বইয়ের

কথা শুনে থাকবেন। বিশেষ করে বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিদের পছন্দের তালিকায় স্থান পাওয়া বইয়ের মধ্যে ‘দ্য আর্ট অব ওয়ার’ প্রায়ই পাওয়া যায়। বইয়ের লেখক সান জু (Sun Tzu)। তিনি একজন চৈনিক সামরিক কৌশলবিদ, লেখক এবং দার্শনিক ছিলেন। এই পৃথিবীতে তার পদচারনা আড়াই হাজার বছর পূর্বে। খ্রীষ্টপূর্ব ৫৪৫ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে জানা যায়। বাশেঁর চাটাইয়ের উপর তিনি তার অভিজ্ঞতালব্দ জ্ঞান লিপিবদ্ধ করে গিয়েছিলেন। গত আড়াই হাজার বছর ধরে সেই জ্ঞানকে কাজে লাগিয়েছেন শাসক, সেনাপতি থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী-খেলোয়ারসহ বিভিন্ন ধরনের মানুষ। সান জু’র সেই জ্ঞানই ‘দ্য আর্ট অব ওয়ার’ এর মোড়কে সন্নিবেশিত। ৫০০ সালে তিনি যুদ্ধবিদ্যা বিষয়ক বই ‘দ্য আর্ট অব ওয়ার’ রচনা করেন। বিখ্যাত অনেক জেনারেল তার বইটি বাস্তবজীবনে প্রয়োগ করেছেন। আধুনিক যুদ্ধবিদ্যার ইতিহাস যে কত প্রাচীন তা বইটি থেকেই বোঝা যায়। প্রকৃতপক্ষে মানুষের জন্মের সাথে যেখানে যুদ্ধের সম্পর্ক আছে সেখানে যুদ্ধবিদ্যায় উন্নত হওয়া অস্বাভাবিক নয়। মানব ইতিহাসের একটি বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে যুদ্ধ। জীবনের মতো একটি বড় যুদ্ধেও আপনি সান জু’র কাছ থেকে অনেক উপদেশ পেতে পারেন।

সান জু’র এই বইটির বিশেষত্ব হলো এতে শুধু তত্ত্বের বুলি আওড়ানো হয়নি, সেইসাথে প্রায়োগিক দিকেও বেশ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তাই বইটি যুদ্ধের মতো ধ্বংসাত্মক ক্ষেত্র ছাড়াও অনেক গঠনমূলক ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হচ্ছে।

যুদ্ধ সম্পর্কে সান জু’র এই ২০টি উপদেশ দেখে রাখতে পারেন…..

১। একজন নেতা দৃষ্টান্ত দিয়ে,উদাহরণ দেখিয়ে নেতৃত্ব দেন। বলপ্রয়োগ করে নয়। আপনার অধিনস্তদের জন্য আপনিই একজন ভালো দৃষ্টান্ত হয়ে উঠুন।

২! আপনাকে নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। আত্মবিশ্বাস সব কাজের জন্যই বিজয়ীর অন্যতম হাতিয়ার। পরাজিতের সম্বল আত্ম-অবিশ্বাস আর অহঙ্কার।

৩। শক্তিশালী অবস্থায় নিজেকে অন্যের কাছে দুর্বল দেখান। দুর্বল মুহূর্তে দেখান শক্তিশালী। তাহলে শত্রুকে সহজেই বিভ্রান্ত করতে পারবেন।

৪। যদি আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী সব দিক থেকেই নিরাপদে থাকে তাহলে তার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন। সে শক্তিতে আপনার চেয়ে এগিয়ে থাকলে তাকে এড়িয়ে যান। যদি বিপক্ষ খুব বদমেজাজী হয় তাহলে তাকে রাগাতে চেষ্টা করুন। দুর্বলের অভিনয় করুন, যাতে সে আরও বেশি উদ্ধত হয়ে যায়। যদি সে অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যে থাকে তাহলে তাকে সে অবস্থায় থাকতে দিবেন না।

শত্রুর দুর্বলতায় আঘাত করুন

৫। তার শক্তি যদি একতাবদ্ধ থাকে তাহলে বিচ্ছিন করে ফেলুন তার শক্তিকে। যদি তার দলের মধ্যে অনেক বেশি ঐক্য ও সৌহার্দ্য বজায় থাকে তাহলে তাদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করুন। তার দুর্বলতার জায়গায় আঘাত করুন, যখন বা যেখানে আপনি অনাহুত সেখানেই সেই মুহূর্তেই উপস্থিত হন।

৬। শত্রুকে লড়াই ছাড়া পরাজিত করাই যুদ্ধের সেরা কৌশল। যদি আপনি অবরোধ করেন কিংবা অন্য কোনোভাবে যুদ্ধ ছাড়াই জিতেতে পারেন তাহলে সেটাই হবে সেরা কৌশল।

৭। শ্রেষ্ঠ কৃতিত্ব হচ্ছে লড়াই না করেই শত্রুর প্রতিরোধকে ভেঙে ফেলা। এর জন্য প্রয়োজনে তীক্ষ্ণ বুদ্ধি কাজে লাগাতে হবে।

৮। মনে দৃঢ় ইচ্ছা থাকলে যে কোনো কাজই সম্ভব। যুদ্ধজয় ও দৃঢ় ইচ্ছা ছাড়া হয় না। রবার্ট ব্রুসের গল্প আমরা সবাই জানি।

৯। বিজয়ী যোদ্ধা জিতে নিয়ে যুদ্ধ করতে যায় কিন্তু পরাজিতরা যুদ্ধের মাঠে নেমে তারপর জেতার কথা ভাবে। আগাম জেতার মানসিকতা নিয়ে প্রতিযোগিতায় নামলে জেতা সহজ হয়। তা যুদ্ধ বা যেকোনো কাজের জন্যই নিজেকে শত্রুর আসনে বসিয়ে কৌশল ঠিক করুন।

১০। শত্রুকে জানতে হলে আগে নিজেকেই নিজের শত্রুর জায়গায় নিয়ে ভাবতে হবে। ভাবুন আপনার জায়গায় হলে আপনার শত্রু কী করতো এবং শত্রুর জায়গায় হলে আপনি কী করতেন। তাহলে অনেক কৌশলই আপনার কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে।

১১। বন্ধুদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখুন এবং শত্রুর সাথে ঘনিষ্ঠতর।

১২। জেতার জন্য এরকম পাঁচটি অপরিহার্য উপাদান আছে যা থাকলে যুদ্ধ জয়ের ব্যাপারে পূর্বানুমান করা যায়-

সেই জিতবে –

  • যে জানে কখন লড়াই করতে হবে এবং কখন করা উচিত হবে না।
  • যে জানে কীভাবে নিজের চেয়ে শক্তিশালী এবং দুর্বল উভয় দলকেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
  • যার সৈন্যদলের সকল সদস্য একই প্রেরণা নিয়ে লড়াই করবে।
  • যে নিজেকে প্রস্তুত করেছে এবং সতর্ক হয়ে অপেক্ষা করেছে শত্রুর অপ্রস্তুত সময়ের জন্য।
  • যার জেনারেলগণ যোগ্যতর এবং যিনি তাদের সৈন্য চালনায় কোনো হস্তক্ষেপ করেন না ।

১৩। পরিকল্পনাহীন কাজ জয়ের পথ ধীর করে। আর কাজ ছাড়া শুধু পরিকল্পনা বর্ষণহীন গর্জন। পরিকল্পনা করে কাজ করুন। পরিকল্পনা ছাড়া কাজ করবেন না এবং কাজ না করে শুধু পরিকল্পনা করেই বসে থাকবেন না।

১৪। আপনার পরিকল্পনাগুলো শত্রুর কাছ থেকে আড়ালে রাখুন। নিজেকে একজন রহস্যময়, জটিল মানুষ হিসেবে তুলে ধরুন।

১৫। যুদ্ধ আসলে চাতুর্যের খেলা। যে যত বেশি চাতুর্য দেখাতে পারবে তার জয়ের সম্ভাবনা তত বেশি।

ইরাক,আফগানিস্তান,পাকিস্তান যুদ্ধের খরচের হিসাব। দীর্ঘসূত্রিতা থাকলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে;

১৬। এমন কোনো দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ এখনও হয়নি যাতে অংশ নিয়ে কোনো দেশ লাভবান হয়েছে। তাই চেষ্টা করুন যুদ্ধকে যত সংক্ষিপ্ত করতে পারেন। তা নাহলে আপনি জিতলেও ক্ষতি পরাজিতের চেয়ে কোনো অংশেই কম হবে না।

১৭। শ্রেষ্ঠ অস্ত্রও অব্যবহৃত থাকলে নষ্ট হয়ে যায়। আপনার ভালো কৌশলগুলোকে নিয়মিত চর্চা করুন, তা না হলে সেগুলোও অবহেলায় মরচে পড়ে যাবে। যুদ্ধের ময়দানে ব্যবহার করতে পারবেন না

১৮। নিজের লোকদের সাথে নিজের প্রিয় সন্তানের মতো আচরণ করুন। তাহলে তারা আপনার জন্য মরনপণ লড়াই করতেও প্রস্তুত থাকবে। খারাপ ব্যবহার আপনার শত্রুর জন্য সুযোগ হিসেবে দেখা দিবে। আপনার ক্ষমতার বুহ্যে সহজেই ফাটল দেখা দিবে।

শত্রুকে একদম কোণঠাসা করে ফেলবেন না;

১৯। যখন একটি সৈন্যদলকে ঘিরে ফেলবেন, তখন তাদের জন্য পালানোর পথ রাখুন। শত্রুকে এই আবদ্ধ অবস্থায় মরিয়া হয়ে আক্রমণ করতে যাবেন না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে কোণঠাসা সৈন্যদল জীবনপণ যুদ্ধ করে আপনাকে হারিয়ে দিতে পারে। তাই অযথা শক্তিক্ষয় না করে তাদের পালাতে দিন। সময় এবং পরিশ্রম দুটিই বাঁচবে।

২০। যদি আপনি নিজের এবং প্রতিদ্বন্দ্বীর ক্ষমতা সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখেন তাহলে আর দশটা যুদ্ধের ফল নিয়ে আপনার না ভাবলেও চলবে। এগিয়ে যান, জয় আপনার হবেই। আর যদি শুধু নিজের ক্ষমতা সম্পর্কেই ধারণা থাকে তাহলে প্রতিটি জয়ের জন্যই আপনাকে একবার পরাজিত হতে হবে। যদি নিজেকে এবং প্রতিদ্বন্দ্বী কারো সম্পর্কে কোনো ধারণাই না থাকে তাহলে আপনার শোচনীয় পরাজয় অবশ্যম্ভাবী।

২১.যুদ্ধ পরিচালনার সময় কঠোর থাকুন।সৈন্যদের মনোবল বৃদ্ধি পাবে।

তথ্য- সংগৃহীত এবং পাঠিত।

No comments

Powered by Blogger.